ইন্টারনেট কি? মেগাবাইট কোথায় জমা থাকে?

ইন্টারনেট কি? মেগাবাইট কোথায় জমা থাকে?

ইন্টারনেট নিয়ে মানুষের আগ্রহের কমতি নেই। কোথা থেকে আসে এই ইন্টারনেট, কোথায় গিয়ে শেষ। মেগাবাইট কি, কিভাবে খরচ হয়? এত ফাইল কোথায় জমা থাকে? এমন নানা প্রশ্নের উত্তরের খোজেঁ……

ইন্টারনেট কি?

ইন্টারনেট দুটি শব্দ ইন্টার (Inter) এবং নেটওয়ার্ক (Network) নিয়ে গঠিত । যার মধ্যে ইন্টার(Inter) মানে একে অপরের সাথে সংযুক্ত এবং নেটওয়ার্ক(Network) মানে জাল। ইন্টারনেট হল এমন একটি নেটওয়ার্ক যার মাধ্যমে সারা বিশ্বের কম্পিউটার এক অপরের সাথে সংযুক্ত থাকে। এই কম্পিউটারগুলি তারযুক্ত বা বেতার উপায়ে আন্তঃসম্পর্কযুক্ত এবং ডেটা বিনিময় করে।

সহজ কথায়, ইন্টারনেট হল একটি বিশ্বব্যাপী নেটওয়ার্ক যার মাধ্যমে সারা বিশ্বের কম্পিউটার এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলি পরস্পরের সাথে সংযুক্ত থাকে এবং সহজেই ডেটা স্থানান্তর করে।

ইন্টারনেট বিশ্বের বৃহত্তম নেটওয়ার্ক। ইন্টারনেটে থাকা ডিভাইসগুলি একে অপরের সাথে তামার তার, ফাইবার-অপটিক্যাল তার বা বেতার সংযোগ দ্বারা সংযুক্ত থাকে। ইন্টারনেট হল তথ্য প্রযুক্তির সবচেয়ে আধুনিক ব্যবস্থা।

কিভাবে কাজ করে?

ইন্টারনেট আসলে একটি গ্লোবাল ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক যা সারা বিশ্বের কম্পিউটার সিস্টেমকে সংযুক্ত করে। এটি অনেক উচ্চ-ব্যান্ডউইথ ডেটা লাইন নিয়ে গঠিত যাকে ইন্টারনেটের “ব্যাকবোন” বলা হয়। এই লাইনগুলি প্রধান ইন্টারনেট হাবের সাথে সংযুক্ত থাকে যা অন্যান্য অবস্থানে যেমন ওয়েব সার্ভার এবং আইএসপিগুলিতে ডেটা বিতরণ করে।

ইন্টারনেটের মাধ্যমে মূলত ডেটা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তর করা হয় । “প্যাকেট স্যুইচিং” নামক একটি সিস্টেমের মাধ্যমে ডেটা ইন্টারনেটে স্থানান্তরিত হয় । প্যাকেট স্যুইচিং সিস্টেমে ডাটা কে পৃথক পৃথক টুকরোতে ভাগ করে ডেটা সেন্ড করা হয়, এই প্রতিটি পৃথক টুকরোর সাথে, ডাটাকে যে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়েছে সেই গন্তব্যের ট্যাগ লাগানো থাকে । একবার সমস্ত পৃথক টুকরো কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছে গেলে, সেগুলিকে আবার পুনরায় একত্রিত করে ইমেইল, ওয়েবপেজ বা ডকুমেন্ট তৈরি করা হয় । যা আপনি আপনার ডিভাইসের স্ক্রিনে দেখতে পান । প্যাকেট সুইচিং সিস্টেম অনেক মানুষকে একসাথে ইন্টারনেট ব্যবহার করার সুযোগ দেয় । যদি প্যাকেট স্যুইচিং সিস্টেম ব্যবহার না করা হয় এবং ডেটা গুলোকে টুকরো টুকরো না হয়ে পাঠানো হয়, তাহলে প্রতিবার কেউ একটি সম্পূর্ণ ডাটা পাঠালে নেটওয়ার্কের একটি সম্পূর্ণ অংশ বল্ক হয়ে যাবে এবং সেই ডেটা কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে না পৌঁছা পর্যন্ত অন্য কোন ডেটা ট্রান্সফার হবে না ।

অনেক মানুষ ইন্টারনেট ইউজ করার অর্থ হল অনেক বেশি ডেটা জেনারেট করা এবং সেই সাথে অনেক বেশী ডাটা বিনিময় করা । অনেক বেশী মানুষের মধ্যে প্রয়োজনীয় ডেটা আদান প্রদান সহজ করার জন্য সার্ভার ব্যবহার করা হয় ।

ইন্টারনেট কি? তা হল ফিজিক্যাল ক্যাবল বা তারের একটি ওয়ার্ল্ডওয়াইড নেটওয়ার্ক । যার মধ্যে তামার টেলিফোন ক্যাবল, টিভি ক্যাবল এবং ফাইবার অপটিক ক্যাবল অন্তর্ভুক্ত । এমনকি Wi-Fi এবং 3G/4G এর মতো ওয়্যারলেস কানেকশনগুলোও ইন্টারনেট অ্যাক্সেস করার জন্য এই ফিজিক্যাল ক্যাবলের উপর নির্ভর করে ।

আপনি যখন কোন ওয়েবসাইট ব্রাউজ করার জন্য আপনার কম্পিউটারের ব্রাউজারে হিট করেন, তখন আপনার কম্পিউটার সেই ওয়েবসাইটের সার্ভারে এই ক্যাবলের মাধ্যমে একটি রিকোয়েস্ট পাঠায় । সার্ভার হল যেখানে ওয়েবসাইটগুলির তথ্য সংরক্ষণ করা থাকে এবং এটি অনেকটা আপনার কম্পিউটারের হার্ডড্রাইভ অর্থাৎ হার্ডডিস্কের মতো কাজ করে ৷ রিকোয়েস্ট আসার পরে, সার্ভার ওয়েবসাইটটি চেক করে এবং সঠিক ডেটা আপনার কম্পিউটারে ফেরত পাঠায় । আর এই সমস্ত বিষয়টি মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ঘটে ।

ইন্টারনেটের মালিক কে?

ইন্টারনেট এমন জিনিস নয় যে, এটিতে নির্দিষ্ট কারো অধিকার আছে । ইন্টারনেট আবিষ্কারের পেছনে অনেকের অবদান রয়েছে । ইন্টারনেট মূলত ইন্টারনেট সোসাইটি দ্বারা পরিচালিত হয় । এই ইন্টারনেট সোসাইটি হল একটি স্বেচ্ছাসেবী সদস্য সংগঠন । এর প্রধান উদ্দেশ্য হল ইন্টারনেট প্রযুক্তির মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী যোগাযোগের বিকাশ ঘটানো । 

ইন্টারনেট তথ্য ব্যবস্থা কার্যত কোনো ব্যক্তি বা কোম্পানির নিয়ন্ত্রণের বাইরে । ইন্টারনেটে অনেক প্রতিষ্ঠান, স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন সেবা প্রদানকারীকে সামান্য মালিকানা হিসেবে মনে করা যেতে পারে । কিছু ইন্টারন্যাশনাল সংস্থা ইন্টারনেটের কাজ দেখাশোনা এবং তাদের আন্তর্জাতিক মান নির্ধারণের কাজ পরিচালনা করে ।
এরকম কয়েকটি প্রধান আন্তর্জাতিক সংস্থা হল –

  • ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন – ইন্টারনেটের জন্য প্রযুক্তিগত মান নির্ধারণ করে।
  • আইসিএএনএন (ইন্টারনেট কর্পোরেশন ফর অ্যাসাইনড নেমস অ্যান্ড নাম্বার) – আইপি অ্যাড্রেস এবং ডোমেইন নামের জন্য মান নির্ধারণ করে ।
  • ইন্টারনেট প্রকৌশল টাস্কফোর্স
  • ইন্টারনেট আর্কিটেকচার বোর্ড

ইন্টারনেট কোথা থেকে আসে?

আমি এখানে আপনাকে জানাতে যাচ্ছি যে এটি সমগ্র বিশ্বের কম্পিউটারকে সংযুক্ত করে তৈরি একটি ওয়েব ছাড়া আর কিছুই নয়।

ওয়েবসাইট, ব্লগ, অনলাইন অ্যাপস এবং অনলাইন গেম যা আমরা খেলি সেগুলো সার্ভার নামক কম্পিউটারে সংরক্ষণ করা হয় এবং এটি সর্বদা 24 ঘন্টা 7 দিন চালু থাকে। সার্ভার সুবিধাটি ওয়েব হোস্টিং সংস্থাগুলি দ্বারা সরবরাহ করা হয় যাদের 99.99% আপটাইম রয়েছে অর্থাৎ তাদের সার্ভার কম্পিউটার সর্বদা দিন এবং রাতে চালু থাকে।

সারা বিশ্বের সার্ভারগুলি ফাইবার অপটিক্স ক্যাবল নামে একটি কেবল দ্বারা সংযুক্ত, এর ভিতরে ডেটা আসা এবং যাওয়া উভয় সুবিধা রয়েছে।

এবং তাদের তারের পুরুত্ব একটি মানুষের চুলের সমান। এটি দুর্দান্ত গতিতে ডেটা স্থানান্তর করতে সক্ষম। এভাবে নেটের যাবতীয় দায়-দায়িত্ব এসব তারের ওপর, কেন এগুলো সমুদ্রের ভিতর থেকে নিয়ে আসা হয়েছে এবং এভাবে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিয়ে ইন্টারনেট সুবিধা তৈরি করা হয়েছে।

ইন্টারনেটে স্যাটেলাইটের অবদান খুবই কম। এর বেশির ভাগই সারা বিশ্বে শুধুমাত্র সমুদ্রের অভ্যন্তরে থাকা সাবমেরিন ক্যাবলের কারণে।

বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে বললে, গুগলের কাছে সবচেয়ে বেশি ডেটা রয়েছে এবং সেই ডেটা ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশ্বের সমস্ত দেশে প্রেরণ করা হয়। এভাবে দেখলে, ইন্টারনেট একেবারে বিনামূল্যের একটি জিনিস, তবে একে ডিস্ট্রিবিউট করার জন্য যে সরঞ্জামগুলির প্রয়োজন হয় তা অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং এর রক্ষণাবেক্ষণের খরচও অনেক বেশি । এই কারণেই যখনই একজন ব্যক্তি তার অপারেটরের কাছ থেকে ইন্টারনেট সংযোগ নেন, তখন তাকে অর্থ প্রদান করতে হয় ।

ইন্টারনেট কিভাবে তৈরি হয়?

  • ইন্টারনেট তৈরি করার জন্য প্রথমে ডাটাবেস সার্ভার ইনস্টল করা হয় । এরপর ওই ডাটাবেস কম্পিউটারগুলোকে ফাইবার ক্যাবলের সাহায্যে আইপি ও টিসিপি প্রযুক্তির মাধ্যমে কানেক্ট করা হয় ।
  •  তারপর সেই ক্যাবলের সাহায্যে বিশ্বের অন্যান্য বড় ডাটাবেস কানেক্ট করা হয় । এভাবে একটি ইন্টারনেট ওয়েব ক্রিয়েট হয় । যা সারা বিশ্বের ডাটাবেসের সাথে সংযুক্ত । 
  • তারপর সেই ডাটা বেস আপনার কম্পিউটারের সাথে তারের মাধ্যমে বা ওয়্যারলেসের মাধ্যমে আপনার রাউটারের মাধ্যমে সংযুক্ত থাকে । এবং এভাবে আপনি সহজেই ইন্টারনেট চালাতে পারেন ।

তো মেগাবাইট কোথায় গেল! কোথায় জমা হলো আর কোথায় খরচ হলো! এগুলো মূলত সার্ভিস প্রোভাইডারদের দেয়া বিভিন্ন প্যাকেজ। এখনতো ব্রডব্রান্ড সংযোগগুলো আনলিমিটেড ডাটা ব্যবহারের সুযোগ দেয়। ইন্টারনেট মূলত সারা বিশ্বের একই সংযোগের ভিতর থাকা সমস্ত কম্পিউটারকে ব্যবহারের অনুমতি দেয়া। আশা করি ইন্টারনেট কি কিছুটা হলেও ধারানা পেয়েছেনে আপানারা।

তথ্যসূত্র: অঞ্জন ও গুগল

COMMENTS (1)

  • Elias Ahmad
    August 2, 2023

    আলহামদুলিল্লাহ সময় উপযোগি প্রয়োজনিয় পোষ্ট। এমন লেখা আরো চাই। আল্লাহ আপনার কলমে বরকত দান করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

MENU